২০২৪ প্রায় শেষের দিকে, ২০২৫ সাল চলে আসতেছে! অথবা আপনি যখন এই পোস্ট পড়ছেন তখন হয়তো অলরেডি ২০২৫ সাল চলে আসছে। কোনো একটা জিনিস ভালো করে বানাতে হলে সেটার জন্য ভালো একটা প্ল্যানিং এর প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি আমাদের লাইফেও ভালো কিছু করতে চাইলে, অথবা কিছু একটা ভালো করে করতে চাইলে সেটার জন্যেও প্রপার প্ল্যানিং এর দরকার। আর ঠিক তাই ২০২৫ সালটাকে আরো বেশী প্রোডাক্টিভ করতে, আরো বেশী কাজে লাগাতে দরকার প্রপার প্ল্যানিং।
আমি আজকে প্রায় ৮ বছর ধরে আমার প্রতিদিনের লাইফে কি কি করতে হবে সেটা আগেভাগে প্ল্যান করে রাখি। এতে আমাকে সারাদিন লস্ট অবস্থায় থাকতে হয় না, কোনটা ফেলে কোনটা করবো সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। বরং এই ভাবার বা প্ল্যানিং টা আগেভাগেই করে রাখার চেষ্টা করি। আমাদের প্রত্যেকের লাইফেই বড় কোনো রেসপন্সিবিলিটি আছে, সেটার পাশাপাশি আমরা আমাদের কোনো হবি, অথবা টেকনিক্যাল স্কিল অথবা নানান কাজ করতে চাই। বাট নিজের রেসপন্সিবিলিটি কমপ্লিট করার পর সময় কোথায় বলেন? আপনি ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন? সেখানে আপনাকে একটা ভালো সময় স্পেন্ড করতে হয়। আপনি চাকরি করছেন? সেখানেও আপনাকে একটা ভালো সময় কাটাতে হয়। তারপর এগুলোর পাশাপাশি নিজের লাইফে ফ্রি কিছু সময়, বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজনের সাথে কিছু সময় স্পেন্ড করতে হয়, এবং আমি আপনাকে এটার জন্য আরো এনকারেজ করি যে নিজের ভালো লাগার মানুষদের সাথেও কিছুটা সময় কাঁটান, এটা ওভারল আমাদের লাইফ ও হেলদের জন্যেও ভালো। বাট এতকিছু করে আর নিজের কিছু একটা করার সময়টা কোথায়?
হ্যাঁ সময় বের করতে পারবেন এতকিছুর মাঝেও, যদি আপনি আপনার লাইফটাকে প্রপারলি প্ল্যানিং এর মধ্যে রাখেন। আপনি স্পেসেফিকভাবে আপনার লাইফটাকে সপ্তাহ হিসেবে ভাগ করে ফেলবেন। যে এক সপ্তাহে আপনাকে কি কি কাজ করতে হবে, আর কোনটার পিছনে কতো সময় স্পেন্ড করতে হবে। ধরেন সপ্তাহে টোটাল ঘণ্টা হয় ১৬৮ ঘণ্টা। এরমধ্যে ঘুম, খাওয়া দাওয়া মিলিয়ে যাবে আপনার অ্যারাউন্ড ৬০ ঘণ্টা। যদি অফিস করেন অথবা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন তাহলে ঐখানে আরো ৬০ ঘণ্টা। টোটাল হইলো ১২০ ঘণ্টা, কিন্তু তারপরেও হিসেব করে দেখবেন হাতে আছে ৪৮ ঘণ্টা সময়। এই ৪৮ ঘণ্টাকে আপনি আপনার বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি দিয়ে ভাগ করে নিবেন।
এই ধরনের আপনি একটা SaaS প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এ সময় দিতে চাচ্ছেন, তো প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে দিলে সপ্তাহে হবে ১৪ ঘণ্টা। তারপর নতুন কোনো স্কিল শিখতে চাচ্ছেন, সেটাতে সপ্তাহে হবে ৬-৭ ঘণ্টা দিলেন। তারপর আবার আপনি ব্লগ লিখতে, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন পছন্দ করেন, সেখানে সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা দিলেন। তাইলে এতসব অ্যাক্টিভিটি করেও ৩০-৩২ ঘণ্টা গেলো, আরো বাকি রইলো ১৬-১৮ ঘণ্টার মতো। এই সময়টা আপনি আপনার ফ্রি টাইম হিসেবে, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে স্পেন্ড করলেন। আমি জাস্ট একটা উদাহরণ দিলাম, আপনি এরকম সপ্তাহে কোন কাজে কতটুকু সময় খরচ করবেন সেটা প্ল্যান করে ফেলবেন, তারপর ঘণ্টা হিসেবে আপনার সপ্তাহের ৭ দিনে সেটার পিছনে অফডে তে একরকম সময়, আর ওয়ার্কিং ডে তে আরেকরকম সময় খরচ করে করে আপনার কাজগুলোকে এগিয়ে নিবেন।
আর ঠিক এরকম টাইম ব্লক সিস্টেমে ডেইলি প্ল্যানিং করার জন্যই আজকে আমি আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি একটা ডেইলি প্ল্যানার। এই ডেইলি প্ল্যানারটা আপনারা সম্পূর্ন ফ্রিতে এই লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
[প্ল্যানার ডাউনলোড করুন] - এটা A5 পেপারের সাইজে বানানো, আপনারা চাইলে A4 পেইজে দুইটা পাশাপাশি প্রিন্ট করতে পারেন।
আপনাদের কনভিনিয়েন্সের জন্য আমি বাংলা এবং ইংলিশ দুই এডিশনেই প্ল্যানারটা তৈরি করেছি। আপাতত এটা পিডিএফ আকারে আপনারা পাবেন, বাট আপনাদের যদি ইন্টারেস্ট থাকে তাহলে আমি ভবিষ্যতে উইকলি প্ল্যানারসহ এরকম একটা ডেইলি প্ল্যানার ৩/৬ মাসের বানিয়ে ডিস্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করবো (এই কাজে কেউ হেল্প করতে পারলে প্লীজ আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, ধন্যবাদ)। এই প্ল্যানারে বাম পাশে আপনার আজকের দিনের মূল কি কি কাজ করবেন সেটা লিস্ট করার অপশন আছে, পাশাপাশি আজকের কোনো দায়িত্ব বা করনীয় থাকলে সেটাও এখানে টুকে ফেলতে পারবেন। পাশাপাশি ডেইলি লাইফ প্ল্যানিং এর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ন জিনিস ঘুমের হিসাব-নিকাশ রাখার একটা অপশনও দেওয়া হয়েছে। ঘুম গুরুত্বপুর্ন জিনিস, যথাসময়ে ঘুমানো এবং যথাযথসম্ভব সাড়ে ৬ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা যার যেমন ঘুম প্রয়োজন ততটুকু প্রতিনিয়ত পূরণ করা অত্যাবশ্যকীয় একটা জিনিস। আর ডান পাশে হচ্ছে আমাদের সময় ধরে ধরে কখন কি কাজ করবেন, আর কতক্ষণের জন্য করবেন সেটা টুকে ফেলতে পারবেন।
আমি এক্সাম্পল হিসেবে নিচে দুইটা ডেইলি প্ল্যান শেয়ার করলাম। প্রথমটা হচ্ছে আমাদের ওয়ার্কিং ডে তে যেমন প্ল্যানিং হতে পারেঃ
এখানে খেয়াল করবেন আমরা আমাদের ওয়ার্কিং ডে তে ৩ টা মেইন কাজ লিস্ট করেছি, একটা হচ্ছে SaaS প্রোজেক্টে কাজ করা, তারপর নিজের অফিস বা ইউনিভার্সিটির কাজ, তারপর ব্লগিং বা রাইটিং রিলেটেড কাজ। তারপর ঘুমের সময়ও প্ল্যান করেছি, আবার নিজের কিছু দায়িত্বের কাজের লিস্টও করেছি। তারপর ডান পাশে আমাদের কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী, বা যেটাতে আমাদের বেশী ফোকাস দেওয়া উচিত সেটা আগে করার চেষ্টা করতেছি, তারপর সুন্দর করে দিনের বাকি অন্যান্য কাজ মেইন কাজগুলোর সাথে করার প্ল্যান করেছি। তারপর অফডেতে আমাদের প্ল্যান যেমন হতে পারেঃ
এখানেও খেয়াল করবেন আমরা অফডেতে আমাদের অন্যান্য কাজে সময় দিচ্ছি। পাশাপাশি হেভি কিছু রেস্পন্সিবিলিটি যেগুলোতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে সেগুলো লিস্ট করেছি। ঘুমের সময় যথাযথভাবে মেইন্টেইন করছি ওয়ার্কিং ডে এর মতো করেই। তারপর দিনের বাকি কাজ গুরুত্বপুর্ণ কাজগুলো আগে, আর কম গুরুতপূর্নগুলো পরে দিয়ে আমাদের দিনের প্ল্যানটা করেছি। আমাদের দুই ওয়ার্কিং ডে আর অফ ডে তেই প্রচুর ফ্রি সময় এবং পাশাপাশি ফ্যামিলি টাইম রাখার চেষ্টা করেছি। এখানে আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন যে এভাবে অফডে ২ ঘণ্টা করে কিছু শেখার পিছনে খরচ করলে সপ্তহে মাত্র ৪ ঘণ্টা হয়, তো সেক্ষেত্রে ওয়ার্কিং ডে তে অল্টারনেট করে করে একেকটা কাজ করতে পারেন, বাট সপ্তাহ আপনার কাঙ্ক্ষিত সময় বা ঘণ্টা যাতে পূর্ন হয় সেটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তো এই হইলো আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য একটা ডেইলি প্ল্যানার, আপনারা অবশ্যই আপনাদের লাইফের কাজ অনুযায়ী, কোনটা বেশী গুরুত্বপুর্ণ আর কোনটা কম সেটা অনুযায়ী ডেইলি প্ল্যান করবেন। আর সপ্তাহে কোন কাজে আপনি কতো ঘণ্টা খরচ করবেন সেটাও আগেভাগে প্ল্যান করে নিবেন, আর কাজ অনুযায়ী প্রতিনিয়ত সেটা করে করে সপ্তাহের সময়টা ঐ কাজের পিছনে স্পেন্ড করবেন। এখানে কন্সিস্টেন্সি বিষয়টা খুবই গুরুতপূর্ণ। প্রতিদিন কাজ করবেন অল্প অল্প, বাট রেগুলার করবেন, তাইলেই সপ্তাহ শেষে সেটা থেকে ভালো একটা ফল পাবেন।
তো আমার এই প্ল্যানারটা ভালো লেগে থাকলে সবার সাথে শেয়ার করবেন, আর আপনার কোনো সাজেশন বা ফিডব্যাক থাকলে প্লীজ আমাকে আমার ফেসবুকে, টুইটারে, লিংকডিনে বা ইমেইলে ([email protected]) জানাবেন। আর প্লীজ দয়া করে কেউ পিডিএফটা সরাসরি ডাউনলোড করে নিজে কোথাও আপলোড করবেন না। আমাদের অ্যাজ এ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডাউনলোড কাউন্টটা দেখলেই মনে শান্তি লাগে। এখানে আমার আর কিছু চাওয়ার নাই, ডাউনলোড কাউন্টটা প্লীজ আপনাদের নিজের কাছে নিয়ে যাবেন না, অনেক অনেক ধন্যবাদ!